ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (সংক্ষেপে ভি. জে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়।[৬][৭] ১৮৮০ সালে এই বিদ্যালয়টি চুয়াডাঙ্গার বিদ্যোৎসাহী জমিদার আবুল হোসেন জোয়ার্দার কর্তৃক চুয়াডাঙ্গা সদরে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় বিদ্যালয়ের নাম ছিল এস,ই,স্কুল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদ্যালয়টিতে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং দেওয়া হতো। বিদ্যালয়টি চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। ২০১১ সালে স্কুলটির শ্রেণীর কার্যক্রম প্রভাতী ও দিবা এই দুই শিফটে বিভক্ত হয়। স্কুলটিতে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়।
স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী জমিদার আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দার সাহেব ১৮৮০ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার সময় এই বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় এস.ই.স্কুল ।[১] পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়টি এইচ.ই.স্কুলে উন্নীত হয়। আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দার বিদ্যালয়ের জন্য সাত একর জমি দান করেছিলেন। তিনিই ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে প্রচলিত আছে:- "জ্ঞানের আলো জ্বালাতে হেথায় সকলের ঘরে ঘরে আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দার বিদ্যালয় গড়েন চুয়াডাঙ্গা শহরে"। শুরুতে কারা আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের সহকর্মী ছিলেন, কতজন ছাত্র নিয়ে বিদ্যালয়টি চালু হয়েছিল, সেই ইতিহাস কালের জানা যায় নি।[৮]
আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের পরবর্তীতে জনাব মন্মথনাথ গুই এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৮৭ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়া শাসনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ভিক্টোরিয়া জুবিলি এইচ,ই,স্কুল সংক্ষেপে ভি, জে, এইচ,ই,স্কুল। একই উপলক্ষে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই শহরেও একটি ভি,জে হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।[৮]
প্রথমে টিনের ঘরে পাঠদান শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টি ১৯৭০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সরকারীকরণ হয়।[৮][১] তখন থেকে এই বিদ্যালয়ের নামের সাথে সরকারি যুক্ত করা হয় অর্থাৎ ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (সংক্ষেপে ভি, জে, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়)। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। শিক্ষা বোর্ড (যশোর শিক্ষা বোর্ড[১]) কর্তৃক সকল ধরনের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে বিদ্যালয়টি জেলার মানুষের কাছে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে।[৯] বিদ্যালয়টির ক্রমে ক্রমে শিক্ষার মান ও ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রাখতে ও আরো অধিক ছাত্রদের বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ২০১১ সালে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম দুইটি শিফটে রুপান্তর করা হয়।[৮] বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে সবক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হতো। তবে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (সংক্ষেপে মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৪টি নির্দেশনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত নাম ব্যবহার না করে পুর্ণ নাম ব্যবহারের নির্দেশ দিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বিলাল হোসেন ৩ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিদ্যালয়ের পূর্ণ নাম ও প্রতিষ্ঠাকাল লেখার কাজ সমাপ্ত করেন। তারপরও স্থানীয়রা বিদ্যালয়টিকে ভি,জে, স্কুল বলে সম্বোধন করে।
ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইটি মাঠ রয়েছে একটি বিদ্যালয়ের ভিতরে অপরটি বিদ্যালয়ের বাইরে। বিদ্যালয়ে স্থাপনা বলতে রয়েছে: একটি চারতলা, একটি তিনতলা, পাঁচটি দুইতলা ভবন যার মধ্যে দুইটি ছাত্রাবাস এবং একাধিক একতলা বিশিষ্ট ভবন। এছাড়া বিদ্যালয়ে দুইটি সাইকেল গ্যারেজ, একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ, একটি দ্বিতল মসজিদ, একটি বিশুদ্ধ পানির প্লান্ট[১০] এবং একটি স্থায়ী মঞ্চসহ মিলনায়তন রয়েছে। এখানে একটি কম্পিউটার ল্যাব ছাড়াও দুইটি স্থায়ী মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, চারটি পৃথক ল্যাব রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষার জন্য। এখানে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে।[১১] বহু পুরাতন বিদ্যালয় হওয়ায় এ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটি বেশ সমৃদ্ধ ও বড়। এই বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বহুপুরাতন বই সংরক্ষিত আছে। এখানে পাঠসহায়ক বইসহ, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কৌতুক, ইতিহাস গ্রন্থ, প্রবন্ধ, বিজ্ঞানভিত্তিক বই ও ধর্মীয় বই সহ বিভিন্ন ধরনের ১০,০০০ বই সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও স্কুল মাঠের একপাশে শহীদ মিনার আছে।[১২]
২০২০ সালের পূর্বে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যোগ্য ছাত্ররা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করত। তবে বর্তমানে লটারির মাধ্যমে ভর্তির কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় শ্রেণীতে প্রতি শাখায় ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। প্রভাতী শিফটে ১২০ জন ও দিবা শিফটে ১২০ জন সহ মোট ২৪০ জন ভর্তি হতে পারে। এছাড়াও ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রভাতী শিফটে ১২ জন ও দিবা শিফটে ১২ জন সহ মোট ২৪ জন ভর্তি হতে পারে। ডিসেম্বর মাসেই এ ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়।[১৩]
বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম দুইটি শিফটে বিভক্ত প্রভাতী ও দিবা। বিদ্যালয়ে উভয় শিফটে ৬টি পিরিয়ডে বিভক্ত করে শ্রেণী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। প্রভাতী শিফটের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে এবং শেষ হয় দুপুর ১২ টায়। দিবা শিফটের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে এবং শেষ হয় বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে। তবে এই সময়সীমা শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর জন্য ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম কিছুটা কম। উভয় শিফটে ৩য় পিরিয়ডের পর ৩০ মিনিটের জন্য বিরতি থাকে। এই সময় ছাত্রদের টিফিন দেওয়া হয়।[১]